দুযুগ ধরে দেখে আসা স্বপ্ন সত্যি হল পদ্মাপারের বাসিন্দাদের। বাংলাদেশের (bangladesh) পদ্মা নদীর বুকে তৈরি হল পদ্মা সেতু (padma setu)। স্বপ্নপূরণ হল বাংলাদেশবাসীর। পদ্মা নদীর উপর দিয়েই বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ ঘটাল পদ্মা নদী। সর্বজন প্রশংসা পেলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যেই একাধিক বিশ্বরেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশের বহু প্রতিক্ষীত এই পদ্মা সেতু।
জানা গিয়েছে, ১৯৯৯ সালের মে মাসে প্রথম এই সেতু তৈরির প্রকল্পের সূত্রপাত হয়েছিল। তারপর প্রধানমন্ত্রী হাসিনার হাত ধরে ২০০১ সালের ৪ ঠা জুলাই মাওয়া প্রান্তে আনুষ্ঠানিক ভাবে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। কথিত আছে, ২০০৯ সালে রবিন শ্যাম নামে এক ব্রিটিশ নাগরিকের নেতৃত্বে এই সেতুর নকশা তৈরি কাজ শুরু হয়ে সম্পন্ন হয় ২০১০ সালে। বাংলাদেশের (bangladesh) অর্থেই পদ্মা সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী।
সময়টা ২০১৪ সালের ৮ ই ডিসেম্বর, আনুষ্ঠানিক ভাবে পদ্মা সেতু (padma setu) তৈরির কাজ শুরু হওয়ার ২৭৫৭ দিন অর্থাৎ ৬৬১৬৮ ঘণ্টা পর সম্পন্ন হল এই সেতু তৈরির কাজ। প্রায় ১০ কিমি দীর্ঘ এবং প্রায় ২২ মিটার চওড়া এই সেতু তৈরির পেছনে রয়েছে ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিক এবং অন্যান্য কলাকুশলীর নিরলস প্রচেষ্টা। চারটি লেনের এই পদ্মা সেতুতে প্রায় সওয়া ছয় কিলোমিটার রয়েছে জলের উপর।
চিনের এক নামী কারখানার ২৯৪ টি স্টিলের ফাঁপা থাম দিয়ে তৈরি এই সেতুর একটি থাম প্রায় ৫০ হাজার টন ভার বহ্ন করতে সক্ষম। এই পদ্মা সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার জামিলুর রেজা চৌধুরী মারা যাওয়ার পর অধ্যাপক শামীম জাহান বসুনিয়াকে এই কাজের দায়িত্ব নিতে হয়।
সবথেকে আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে, এই পদ্মা সেতুর নীচ দিয়ে বিরাট রেললাইনও। উপর দিয়ে যান চলাচলের সঙ্গে সঙ্গে নীচ দিয়ে চলবে ট্রেনও। তবে যান চলাচল শুরু হয়ে গেলেও, রেল চলাচলে এখনও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানা গিয়েছে। রিপোর্ট বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এই পদ্মা সেতু দিয়ে দিয়ে প্রায় ৪১ হাজার করে যান চলাচল করতে পারবে।
জানিয়ে রাখি, রিখটার স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্প কিংবা বড় জাহাজের ঘা, সবকিছুই অনায়াসে সহ্য করে নিতে পারবে এই পদ্মা সেতু। প্রায় ৩৮ মিটার দূরে দূরে ২৭৫ কেজি ওজনের ৪১৫ টি ল্যাম্প পোস্ট রয়েছে বাংলাদেশের এই পদ্মা সেতুর উপর। ঘণ্টায় ১৮০- ২০০ কিমি বেগে ঝড় আসে, তাহলেও এই লাইট পোস্টের কোন ক্ষতি হবে না বলছে রিপোর্ট।
এই সেতু তৈরির পেছনে সবথেকে বড় বিষয় হল অবদান। ভারত-সহ মোট ২০টি দেশের অবদান রয়েছে বাংলাদেশের (bangladesh) এই পদ্মা সেতু (padma setu) তৈরির পেছনে। আব্দুল মনিম লিমিটেড জাজিরা এবং মাওয়া প্রান্ত সংযোগকারী রাস্তা তৈরি করতে যেমন সাহায্য করেছে, তেমনই নদীশাসনের দিকটা দেখেছে চিনের সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। আবার এই পদাম সেতুর মূল সেতুর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধু দেশ চিনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি আবার মূল সেতু এবং নদীশাসনের কাজ তদারকির দিকটা দেখেছে।।