আমাদের দেশের প্ৰতিটি রেলস্টেশন এখনো পযন্ত ভারতীয় রেলওয়ে (Indian Railway) দ্বারা পরিচালিত হয়। স্টেশনের লাভ-ক্ষতির হিসাবও হয় ইন্ডিয়ান রেলওয়ের একাউন্টে। এমনকি কোন ট্রেন চালু থাকবে কোন ট্রেন বন্ধ থাকবে সেই সিদ্ধান্ত নেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জেনে অবাক হবেন আমাদের দেশে এমন একটি রেলস্টেশন রয়েছে যার দায়ভার ইন্ডিয়ান রেলওয়ের নয়। এই একটি স্টেশন ছাড়া বাকি সব স্টেশন গুলি ইন্ডিয়ান রেলওয়ে দ্বারা পরিচালিত। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই স্টেশনের আসল রহস্য।
উপরের নিবন্ধটি পড়ার পর আপনাদের মনে কৌতুহল জেগে উঠেছে। আপনাদের কৌতুহল কমাতে বলি, রাজস্থানের নগৌর জেলার অন্তর্গত ‘জলসু’ নামক একটি হল্ট রেলস্টেশন আজকের প্রতিবেদনে। এই একমাত্র স্টেশন যেটি পরিচালনা করেন এলাকার মানুষজন। প্রায় 17 বছরের বেশি সময় ধরে এলাকার মানুষজন এই স্টেশনটির খেয়াল রাখছেন। এমনকি টিকিট কালেক্টারেও এই এলাকার একজন।
উক্ত স্টেশনটি এলাকাবাসীর সংগৃহত অনুদানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হতো। তবে গ্রামবাসীরা এই দায়ভার থেকে মুক্তি চেয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দারস্ত হয়েছে। ব্যাপক লোকসানের কারণে একসময় এই স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই স্টেশন থেকে ৩০ হাজার টাকা মুনাফা আসে। যা সবই সম্ভব হয়েছে এলাকাবাসীর ব্যবস্থাপনায়।
সম্প্রতি 2005 সালে ব্যাপক লোকসানের কারণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ‘জলসু’ নামক এই হল্ট স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত এলাকাবাসীর কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। যার কারণে তারা ১১ দিন টানা ধর্নায় বসে। পরে এলাকাবাসীর কাছে একটি শর্ত রেখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চালু রাখার সিদ্ধান্ত রাখে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, এই স্টেশন থেকে প্রতিনিয়ত ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে ইন্ডিয়ান রেলওয়েকে। তাই এই স্টেশন চালু রাখার দায়ভার পুরোপুরি এলাকাবাসীকে নিতে হবে। দায়িত্ব নিয়ে প্রতিদিন ন্যূনতম ৫০ টি হিসাবে মাসে 1500 টিকিট বিক্রি করতে হবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এই শর্ত এলাকাবাসীর কাছে মঞ্জুর ছিল। কারণ তারা যেকোনো উপায়ে এই স্টেশনটি চালু রাখতে চেয়েছিল। এরপর থেকেই দায়িত্ব নিয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করতে থাকে এবং 1500 টিকিটও দেড় লক্ষ টাকায় কেনা হয়েছিল। অবস্থা সামলাতে মাত্র ৫ হাজার টাকায় এলাকাবাসীরি একজনকে টিকিট কালেক্টর হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল।
শুরুর দিকে অনেক সমস্যা হলেও বর্তমানে এই স্টেশনে 10 টিরও বেশি ট্রেন দাঁড়ায়। এই এলাকার আরো একটি বিশেষ ব্যাপার হলো, এলাকাটি সৈন্যদের এলাকা। শোনা যায় এখানের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই একজন করে সৈনিক আছে। বর্তমানে প্রায় 200-রও বেশি কেউ সেনাবাহিনী, কেউ নৌবাহিনী, কেউ বিমান বাহিনী, কেউ বিএসএফ, আবার কেউবা সিআরপিএফ-এর মতো মর্যাদাপূর্ণ শাখায় নিযুক্ত আছেন। এমনকি এলাকায় 250-রও বেশি অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক রয়েছে। এই সৈন্যদের সুবিধার্থে 1976 সালে ‘জলসু’ নামক হল্ট স্টেশনটি চালু করা হয়েছিল।