এযেন রূপোলী পর্দার গল্প। সিলভার স্ক্রিনের রাজ-সিমরন বলুন, কিংবা রাহুল-মিনাম্মা, ট্রেন (train) সফরের এই প্রেম কাহিনীই হয়ে উঠল বাস্তবের আমির হামজা এবং ফাতেমা তুজ জোহরার প্রেম কাহিনী। তাঁদের সম্পর্কের মধ্যেও অতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে ট্রেন, স্টেশন।
সম্প্রতি দিনে স্যোশাল মিডিয়ায় এক বাংলাদেশের (bangladesh) যুগলের ছবি ভাইরাল (viral photo) হয় ব্যাপকহারে। যা দেখে নেটিজনদের মনে পড়ে গিয়েছে ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ ছবির সেই বিখ্যাত দৃশ্যের কথা। যেখানে স্টেশনে থাকা সিমরন অর্থাৎ কাজলের উদ্দেশ্যে চলন্ত ট্রেন থেকে হাত বড়িয়ে দিয়েছিলেন চলচ্চিত্রের নায়ক রাজ অর্থাৎ শাহরুখ খান।
জানিয়ে রাখি, ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গিয়েছে সিলেটের আমির হামজা এবং ঢাকার ফাতেমাকে। আর তাঁদের পড়নে রয়েছে বিয়ের পোশাক। জানা যায়, ২০১৮ সালে এক ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে পরিচয় হয় আমির এবং ফতেমার মধ্যে। কিন্তু পরিচয়ের কিছুদিনের মধ্যেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন আমির। এই কথা জানার পর, কিছুটা হতবাক হয়ে যান ফতেমা। তিনি ভাবেন, দুদিন আগেই যার সঙ্গে পরিচয় হল, সে কিনা আত্মহত্যা করতে চলেছেন!
এমনটা ভেবে আমিরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে লাগলেন ফতেমা। আসল বিষয়টা হল, প্রেমিকার ধোঁকা দেওয়ার ঘটনাটা মেনে নিতে পারেননি আমির। আর সেই কারণেই এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু ফতেমা তাঁকে এই রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন। এবং এভাবেই তাঁরা একে অপরের প্রেমে পড়ে যান। আর শুরু হয়ে যায় তাঁদের প্রেম কাহিনী। এবিষয়ে ফতেমা বলেন, ‘আমিরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে গিয়ে আমার উপর কিছুটা নির্ভর হয়ে পড়েন আমির। এই অবস্থায় একদিন আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাবও দেন’।
ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করলেও পরবর্তীতে চাকরী সূত্রে সিলেটে আসায় তাঁকে অফিস থেকে স্টেশন অবধি নিয়ে আসা, ট্রেনে তুলে দেওয়া সবকিছুই করতেন আমির। ট্রেনে আগে আমির উঠে, তারপর ফিতেমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাঁকে ট্রেনে তুলতেন। এইভাবে সিলেট স্টেশনে তাঁদের প্রেম জমতে জমতে নিজের অফিসে আমিরের একটা কাজের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন ফতেমা।
তাঁদের প্রেমের বিষয়ে ফতেমা জানান, ‘স্টেশনে বসেই আমরা গল্প করতাম। কিন্তু সময় কিভাবে বেরিয়ে যেত টেরও পেতাম না। অনেক সময় ৯ টার ট্রেনের টিকিট বাতিল করে আবার ১০ টার ট্রেনের টিকিট কাটতাম। আর প্রতিদিনই রেলের গার্ড, চালক দেখতে এক তরুণ এবং তরুণী শেষ মুহূর্তে ট্রেন ধরার জন্য ছুটছেন। আর তাঁরা আমাদের চিনেও গিয়েছিলেন। কিন্তু আমি সিলেটি না হওয়ায় আমিরের বাড়ির লোক বিয়েতে কিছুটা আপত্তি জানিয়ছিল। সেই কারণে ২০২০ সালে ঢাকায় ম্যারেজ রেজিস্ট্রি অফিসে আমরা গোপনে বিয়েটা সেরে নিই। আর বিয়ের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করতেই শুরু হয় ঝামেলা’।
ফতেমা আরও জানান, ‘এরপর দুই পরিবার বিয়েতে রাজি হলে, আমরা সামাজিক বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই। আর সবার আগে সিলেট স্টেশনে ছুটে গিয়ে কিছু ফটোশ্যুটও করি। ঠিক যেভাবে ট্রেন থেকে আমার উদ্দ্যেশ্যে হাত বাড়িয়ে দিতেন আমির, ঠিক সেই ভঙ্গিতেই। আর সেই ছবিটি প্রায় বছর দুই পর স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে দেখে বেশ ভালো লাগল’। তবে বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে এখন মন দিয়ে সংসার করতেন ফতেমা। একদিন যে স্টেশনে দাঁড়িয়েই আমিরের প্রাক্তন প্রেমিকাকে ফোন করে তাঁদের এক করে দিতে চেয়েছিলেন ফতেমা, পরবর্তীতে সেই স্টেশনই তাঁদের এক করে দেয়।