দৃঢ় সংকল্প ও কঠোর পরিশ্রম একজন ব্যক্তিকে তার সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেয়। আজকের প্রতিবেদনে এমনই এক ব্যক্তি সম্পর্কে জানবো, যিনি কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠা দিয়ে ৪.৩৬ লক্ষ কোটি টাকার একটি কোম্পানি তৈরি করেছেন। তার নির্মিত বিখ্যাত কোম্পানির নাম “এয়ারটেল” (Airtel)। যা ৩৫০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী সহ ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর। এবং এই ব্যাক্তি হলেন ‘সুনীল মিত্তল’ (Sunil Mittal), যার সাফল্যের গল্প আজকের আলোচ্য বিষয়।
সুনীল ভারতী মিত্তাল ২৩শে অক্টোবর ১৯৫৭ সালে লুধিয়ানা, পাঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন। সুনীল তার প্রাথমিক শিক্ষা মুসৌরির ভিনবার্গ স্কুলে করেন। এরপর তিনি গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া স্কুলে পড়তে যান। সুনীল ১৯৭৬ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্য কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। সুনীল বলেছেন যে, ‘তিনি ক্লাসরুমের চেয়ে রাস্তায় জীবনের পাঠ বেশি শিখেছেন’।
লুধিয়ানার পরিবেশ এমনই ছিল যে তিনি ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। স্নাতক হওয়ার পরপরই, সুনীল তার বাবার কাছ থেকে ২০,০০০ টাকা ধার নিয়ে সাইকেলের যন্ত্রাংশ তৈরি করা শুরু করেন। তারপর কিছুদিনের মধ্যেই সুনীল বুঝতে পারল এই ব্যবসায় আয়ের একটা লিমিট আছে, কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন আনলিমিটেড কিছু করতে। তাই ১৯৮০ সালে তিনি অন্যান্য ব্যবসার সুযোগের সন্ধানে মুম্বাই চলে আসেন।
সুনীল তার ভাই রাকেশ এবং রাজনের সাথে ভারতী ওভারসিজ ট্রেডিং প্রতিষ্ঠা করেন। সাইকেল ব্যবসা বিক্রি করে আমদানি লাইসেন্স পান। সুনীল প্রথমে একটি সুজুকি ডিলারশিপ পান এবং ভারতে তার বৈদ্যুতিক জেনারেটর বিক্রি শুরু করেন। এতে তিনি প্রচুর মুনাফা অর্জন করেন এবং ব্যবসা জমে উঠতে থাকে। ১৯৮৩ সালে, এই ব্যবসায় পুরোপুরি স্থির হওয়ার আগে সরকার জেনারেটর রপ্তানি নিষিদ্ধ করে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে স্থবির হয়ে পড়ে তার ব্যবসা।
এরপর ১৯৮৬ সালে, তিনি বোতাম ফোন আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তাইওয়ান থেকে পুশ বোতাম আমদানি করেন এবং বিটেল নামে ভারতে বিক্রি শুরু করেন। এতে তার অনেক লাভ হয়। ১৯৯০ এর দশকে, পুশ বোতাম ফোন ছাড়াও, তারা ফ্যাক্স মেশিন এবং অন্যান্য টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম তৈরি করতে শুরু করে। ১৯৯২ সালে, ভারত সরকার প্রথমবারের মতো মোবাইল পরিষেবার জন্য লাইসেন্স বিতরণ শুরু করে।
সুনীল সুযোগের সদ্ব্যবহার করে এবং দিল্লি ও আশেপাশের এলাকার ক্ষেত্রে একটি সেলুলার লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ফরাসি কোম্পানি ভিভেন্দির সাথে হাত মেলায়। ১৯৯৫ সালে, সুনীল মিত্তল সেলুলার পরিষেবা প্রদানের জন্য ভারতী সেলুলার লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন এবং এয়ারটেল ব্র্যান্ডের অধীনে কাজ শুরু করেন। তারপর কিছু দিনের মধ্যেই কোম্পানিটি ২০ হাজার, তারপর ২০ লাখ এবং তারপর ২০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী পায়।
এভাবেই ১৯৯৯ সালে বিশ্বের শীর্ষ টেলিকম কোম্পানি হয়ে উঠল এয়ারটেল। ভারতী এন্টারপ্রাইজ কর্ণাটক এবং অন্ধ্র প্রদেশে সেলুলার অপারেশন সম্প্রসারণের জন্য JT হোল্ডিংস অধিগ্রহণ করে। ২০০০ সালে, ভারতী চেন্নাইতে স্কাইসেল কমিউনিকেশনসও অধিগ্রহণ করে। এর পরে, ২০০১ সালে স্পাইস সেল কলকাতা অধিগ্রহণ করা হয়।
তারপর সি কোম্পানিটি বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ এবং ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। ২০০৮ সালে, এয়ারটেল ভারতে ৬০ মিলিয়ন গ্রাহক সংখ্যা অতিক্রম করে। তখন এয়ারটেলের মূল্য ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। যা ভারতী এয়ারটেলকে বিশ্বের শীর্ষ টেলিকম কোম্পানিতে পরিণত করেছে।