ছোটবেলায় পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হলে ডাক্তাররা প্যাকেট দিতেন। সেটা জলে মিশিয়ে অল্প অল্প করে পান করার নির্দেশ দেওয়া হত। শরীরে জলের ঘাটতি হলে বা কোনো কারণে সারাদিন বেশি জল পান করতে না পারলে বাবা-মায়েরা এক প্যাকেট পাউডার জলে গুলে পান করাতেন। আজও এই ‘ঘরোয়া প্রতিকার’ সুনামের সাথে কাজ করছে। এই প্রতিবেদনে যেটার সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তা হল ওআরএস সলিউশন (ORS) বা ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন।
শরীরে জলের অভাব হলে তা রোগীর জন্য খুবই বিপজ্জনক প্রমাণিত হতে পারে। আপনি কি জানেন যে এই জীবন রক্ষাকারী সমাধানটি তৈরির পিছনে একজন ভারতীয় ডাক্তার রয়েছেন, সেই ডাক্তারের নাম “ডাঃ দিলীপ মহলনবীস”। আজ এই জীবন রক্ষাকর্তা সুনামের সাথে প্রতিষ্ঠিত। গোটা বিশ্বকে এই ডাক্তার এই জীবন রক্ষাকারী সমাধান দিয়েছেন।
ডাঃ দিলীপ পৃথিবীর আলো থেকে দূরে শান্তিতে তার জীবন কাটিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। ১৬ই অক্টোবর, ডাঃ মহলনবীস ৮৭ বছর বয়সে কলকাতার একটি হাসপাতালে মারা যান। তার ফুসফুসে সংক্রমণ ছিল এবং তার বার্ধক্যজনিত রোগেও আক্রান্ত ছিল। ১৯৯৬ সালে, তিনি কলকাতার জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মেডিকেল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং-এ ওআরটি (ওরাল রিহাইড্রাল থেরাপি) নিয়ে গবেষণা করছিলেন।
ডেভিড আর. নলিন, রিচার্ড এ. ক্যাশ এবং ড. দিলীপ একসাথে ওআরএস তৈরি করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, লক্ষ লক্ষ মানুষ বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। বনগাঁ শরণার্থী শিবিরে কলেরা মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। এই ক্যাম্পের রোগীদের ওআরএস দেওয়া শুরু করেন ডাঃ দিলীপ। উল্লেখযোগ্যভাবে, তখন পর্যন্ত ওআরএস অনুমোদিত হয়নি।
ডাঃ দিলীপের সিদ্ধান্তের কারণে শরণার্থী শিবিরের মৃত্যুর হার কমেছে ৩%। এই তথ্য ওআরএস-এর সমালোচকদের চুপ করে দিয়েছে। শুধু ORS কার্যকরই প্রমাণিত হয়নি, এর খরচও ছিল নগণ্য। পরবর্তীতে ওআরএসকে বলা হয় বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার।