নকল আলু বনাম আসল আলু: বাজারে প্রচুর ‘নকল’ আলু রয়েছে, তবে খুব কম লোকই এটি সম্পর্কে জানেন। কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী মানুষকে আসল আলু বলে নকল আলু বিক্রি করছে, কেউ বুজতেও পাচ্ছে না। বাজারে ‘হেমাঙ্গিনী’ বা ‘হেমলিনী’ আলু চন্দ্রমুখীর দামে বিক্রি হচ্ছে, যা দেখতে চন্দ্রমুখীর মতো হলেও স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিন্তু এগুলোকে পাশাপাশি রাখলে বোঝা মুশকিল হয়ে যায় কোনটা চন্দ্রমুখী আলু আর কোনটা হেমাঙ্গিনী আলু। বাজারে চন্দ্রমুখী আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকায়।
অন্যদিকে হেমাঙ্গিনী আলুর দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ টাকা হলেও কিছু ব্যবসায়ী হেমাঙ্গিনী আলুকে চন্দ্রমুখী আলু বলে বাজারে বিক্রি করছেন। ফলে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। হুগলি এগ্রিকালচারাল কো অপারেটিভ সোসাইটির একজন সদস্য জানান, হেমাঙ্গিনী আলু মূলত একটি মিশ্র জাতের আলু। পাঞ্জাবের বিভিন্ন অঞ্চলে এই আলু চাষ করা হয়। এই আলুর বীজ অন্যান্য রাজ্য থেকে এই রাজ্যে আসে।
হুগলির বিভিন্ন জায়গায় এই আলু চাষ করা হয়। এই আলু চাষে ফলন অনেক বেশি হয়। সাধারণত প্রতি বিঘায় ৫০ থেকে ৬০ বস্তা চন্দ্রমুখী আলু উৎপাদিত হলেও, এই আলু উৎপাদন হয় প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ বস্তা। হেমাঙ্গিনী আলু উৎপাদনের হার বেশি হলেও বাজারে এই আলুর চাহিদা অনেক কম। প্রথমত, এই আলু ঠিকমতো সিদ্ধ হতে চায় না। দ্বিতীয়ত, এই আলুর স্বাদ খুব একটা ভালো হয় না।
হুগলি জেলা কৃষি আধিকারিক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “শহুরে এলাকার মানুষের পক্ষে বাইরে থেকে হেমাঙ্গিনী আলু এবং চন্দ্রমুখী আলুতে পার্থক্য করা খুবই কঠিন। চন্দ্রমুখী আলু দিয়ে ক্রস ব্রিডিং করে হেমাঙ্গিনী আলু তৈরি করা হয়। এই আলু হাইব্রিড হওয়ায় কম সময়ে ও কম খরচে চাষ করা যায়’। হুগলি জেলার পুরশুরা ও তারকেশ্বর এলাকায় এই আলু জন্মে। চন্দ্রমুখী আলো যা প্রস্তুত হতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। সেখানে এসব হাইব্রিড আলু দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে উৎপাদন হয়।
কৃষকরা মৌসুমে দুইবার এই আলু চাষ করতে পারেন। হাইব্রিডের জন্য উৎপাদন হারও বেশি। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী এই হেমাঙ্গিনী আলুকে চন্দ্রমুখী আলু বলে বিক্রি করছে। তবে গ্রামবাসীদের বোকা বানানো খুব সহজ নয়, কারণ তারা কৃষিকাজের সাথে জড়িত এবং দেখলেই আলু চিনতে পারে। তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা শহরাঞ্চল বা বস্তির মানুষকে সহজেই বোকা বানিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষি পরিচালক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘উপর থেকে দুটি আলু চেনা খুবই কঠিন। উভয়েরই পাতলা ত্বক, তবে এই আলু দুটি উপায়ে চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত, দুই ধরনের আলু খোসা ছাড়ার পর ভেতরের রং ভিন্ন হয়। চন্দ্রমুখী আলুর ভেতরটা হালকা বেইজ রঙের, আর হেমাঙ্গিনী আলুর ভেতরটা সাদা। দ্বিতীয়ত, এই আলু ভালো সিদ্ধ হয় না, যা আপনি খেলেই বুঝতে পারবেন।