ভারতীয় রেল (Indian Railway) এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক। আপনি যদি দেশের যেকোন প্রান্তে যেতে চান, তাহলে আপনি ভারতীয় রেলপথে ভ্রমণ করে সেখানে পৌঁছাতে পারেন। তবে জানেন কি ভারতে এমন একটি রেলপথ রয়েছে যা ভারতের মালিকানাধীন নয়? ব্রিটিশদের দ্বারা শাসিত। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটাই সত্যি। তবে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, ভারত বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের ৭৫ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে, তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব? তবে এটা সত্য যে, স্বাধীনতার পরেও ভারতে এমন একটি রেলপথ রয়েছে, যেটির মালিকানা ভারত সরকারের নয়, ব্রিটেনের একটি বেসরকারি কোম্পানির।
এই ট্র্যাকটি “শকুন্তলা” রেলওয়ে ট্র্যাক নামে পরিচিত। এই ট্র্যাকটি রয়েছে মহারাষ্ট্রে। শকুন্তলা রেলপথটি অমরাবতী থেকে মহারাষ্ট্রের মুর্তজাপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার প্রসারিত। এই ট্র্যাকটি ব্রিটিশ আমলের। আসলে ব্রিটিশদের সময় থেকেই মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে তুলা চাষ করা হত। সেই সময়ে, ব্রিটিশরা মুম্বাই বন্দরে তুলা নিয়ে যাওয়ার জন্য এই ট্র্যাকটি তৈরি করেছিল। ব্রিটেনের ক্লিক নিক্সন অ্যান্ড কোম্পানি এই রেলপথ নির্মাণের জন্য সেন্ট্রাল প্রভিন্স রেলওয়ে কোম্পানি (CPRC) প্রতিষ্ঠা করে।
এই কোম্পানিটি ১৯০৩ সালে ট্র্যাক স্থাপনের কাজ শুরু করে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই ট্র্যাকে শঙ্কুতলা প্যাসেঞ্জার নামে একটি মাত্র ট্রেন চলত, যার কারণে এই ট্র্যাকের নামও শকুন্তলা রেলওয়ে ট্র্যাক হয়ে যায়। শকুন্তলা প্যাসেঞ্জারে মাত্র ৫টি বগি ছিল, এবং এটি একটি বাষ্প ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হত। তবে ১৯৯৪ সালের পর এই ট্রেনে একটি ডিজেল ইঞ্জিন বসানো হয় এবং বগির সংখ্যাও ৭টি করা হয়। আপনি যদি এই ট্র্যাকে যান, আজও আপনি দেখতে পাবেন সংকেত থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিস, সবকিছুই ব্রিটিশ আমলের।
শকুন্তলা প্যাসেঞ্জার এই ট্র্যাকে প্রায় ৬-৭ ঘন্টার যাত্রা করে। যাত্রার সময়, ট্রেনটি অচলপুর, ইয়াবত্মাল সহ ১৭টি বিভিন্ন স্টেশনে থামে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এই ট্র্যাকের মালিকানা ব্রিটেনের বেসরকারি কোম্পানির কাছে। ভারতীয় রেলওয়ে আজও প্রতি বছর কোম্পানিকে রয়্যালটি প্রদান করে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতীয় রেল প্রতি বছর কোম্পানিকে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা রয়্যালটি দেয়। ভারতীয় রেল বহুবার এটি কেনার প্রস্তাব দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি।