Skip to content

বিশ্বাস ছিল না পুঁথিগত শিক্ষার উপর, নৌকা বানানোর কাঠ দিয়েই জাহাজ বানালেন সেভেন পাশ আলি মানিকফন! পেলেন পদ্মশ্রীও

    img 20220919 144655

    পুঁথিগত পড়াশোনার উপর ছিল না বিশ্বাস। সেই কারণে মাত্র সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনার পর স্কুলের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেন লক্ষদ্বীপের (Lakshadweep) বাসিন্দা মুরাইদুগানদুয়ার আলি মানিকফন ওরফে আলি মানিকফন (Ali Manikfan)। তাঁর ধারণা ছিল, পরিবেশের কাছাকাছি থাকলেই মানুষ অনেক শিক্ষা অর্জন করতে পারবেন। আর এই মানুষটিকেই তাঁর অসাধারণ আবিস্কারের জন্য ২০২১ সালে দেওয়া হয় পদ্মশ্রী সম্মান।

    জানা যায়, পড়াশুনার জন্য বাবা কুন্নুরে পাঠালেও, তা মাঝপথেই ছেড়ে বাড়ি চলে আসেন আলি মানিকফন। পেশায় মৎস্যজীবী দাদুর হাত ধরেই প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হওয়ার পাশাপাশি ভিন্ন রকমের মাছ, জাহাজ, সামুদ্রিক প্রাণী, তারা দেখে দিক নির্ধারণ করার শিক্ষা পান তিনি। এরপর সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার কারণে ইংরেজি, হিন্দি, মালয়ালম, আরবি, ফরাসি, লাতিন, রাশিয়ান, জার্মান, সিংহলি, পার্সি, সংস্কৃত, তামিল ও উর্দু ভাষাতেও বেশ দক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি।

    img 20220919 144721

    অন্যদিকে আবার আবহাওয়া দফতরের অনুরোধে লাইটহাউসে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবেও কাজ করতেন তিনি। কখনও শিক্ষক আবার কখনও কেরানির পদে কাজ করতে করতে হাইড্রোজেন বেলুন উড়িয়ে আবহাওয়ার পরিস্থিতিও নির্ধারণ করার ক্ষমতা অর্জন করেন তিনি। এরপর সমুদ্র মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রের রসায়ানাগারে সমুদ্র জীববিজ্ঞানী সান্থাপ্পন জোনসের অধীনে কাজ করার সুযোগ পান আলি মানিকফন (Ali Manikfan)।

    img 20220919 144710

    বিষয়টা হল, ১৯৮১ সালে মানিকফনের প্রতিভা দেখে এক আইরিশ পর্যটক টিম সেভেরিনের সঙ্গে লক্ষদ্বীপে মানিকফনের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল্কেন জোনস। মানিকফনের জাহাজ তৈরি করার গুণ থাকায়, ওমানে ৩০ জনের সহায়তায় এক বছরের মধ্যে দুজনে মিলে নৌকা তৈরির কাঠ দিয়ে ৮০ ফুট লম্বা, ২২ ফুট চওড়া একটি জাহাজ তৈরি করলেন। তবে এই জাহাজে কোন ধাতুর ব্যবহার কিন্তু তাঁরা করেননি। ‘সোহার’ নামের এই জাহাজ নিয়ে ওমান থেকে ৯,৬০০ কিমি যাত্রা করে চিন পৌঁছন তাঁরা। বর্তমান এখন এই জাহাজটি ওমানের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ম্যারিটাইম হিস্ট্রিতে রাখা আছে।

    img 20220919 144740

    জানিয়ে রাখি, তাঁর এই গুণের কারণে ২০২১ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে সম্মানিতও করা হয়। সম্প্রতি সময়ে কেরলের কোজিকোড় জেলার ওলাভান্না শহরে খুব সাধারণ ভাবেই জীবন যাপন করছেন আলি মানিকফন \(Ali Manikfan)। সৌরশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ, ব্যাটারিচালিত সাইকেল, ১৫ একরের অনুর্বর জমিতে চাষ করে চাষযোগ্য জমিতে পরিণত করেছেন তিনি। গত ছয় দশক ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়ে এই প্রকৃতি থেকেই শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেন তিনি। জানা গিয়েছে, মানিকফনের তিন মেয়ে শিক্ষকা এবং এক ছেলে নৌবাহিনীতে কাজ করছেন। তারাও তাঁদের বাবার আদর্শেই দীক্ষিত। সেইসঙ্গে বাড়িতে খারাব তৈরি থেকে মাছ ধরা সবটাই একার হাতে করেন তিনি।