ছোট থেকেই পড়াশুনায় ভালো ছিলেন বর্ধমানের বড়শুলের বকুলতলা এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মন্ডল (biswajit mandal)। বাবা রবীন মণ্ডল এবং মা টুনি মণ্ডল দুজনেই ছিলেন দিনমজুর। অ্যাজবেস্টারের চাল দেওয়া দু কামরার ছোট্ট ঘরে বাবা মার সঙ্গেই ছিল তাঁদের অভাবের সংসার। কষ্ট করে হলেও ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন বিশ্বজিতের বাবা মা।
সেই কারণে ছোটবেলায় সিডিপি স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে মেমারি কলেজে পলিটিক্যাল সায়েন্স অনার্স নিয়ে ভর্তি হন বিশ্বজিৎ মন্ডল (biswajit mandal)। তারপর সেখান থেকে ২০১৪ সালে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬ সালে প্রথম বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করতে সক্ষম হন তিনি। পড়াশুনার পাশাপাশি আবার কম্পিউটারে (Computer) ডিপ্লোমা কোর্সও করেছিলেন বিশ্বজিৎ।
কিন্তু এতদূর পড়াশুনা করেও কোন চাকরী পাচ্ছিলেন না বিশ্বজিৎ। বাবা মায়ের সামান্য দিনমজুরের রোজগারে এতদূর পড়াশুনা করার পর রেল, PSC, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কোন পরীক্ষা দিতেই বাকি রাখেননি বিশ্বজিৎ। কিন্তু কিছুতেই ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ছিল না বিশ্বজিতের কপালে।
সংসারের হাল বেহাল হচ্ছে দেখে এক বন্ধুর সাহায্যে রাজমিস্ত্রির (Mason) কাজ শুরু করেন বিশ্বজিৎ। কিন্তু হাল ছেড়ে দেননি তিনি। একদিন ঠিকই ভাগ্যের চাকা ঘুরবে এই আশায় একটার পর একটা পরীক্ষা দিয়ে যেতেন তিনি। কিন্তু করোনাকালে বাবা মায়ের কাজ না থাকায়, সংসারের ভার পুরোপুরি এসে পড়ে বিশ্বজিতের কাঁধে। তারপর থেকে আরও বেশি করে কাজ করা শুরু করেন তিনি।
তবে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে থাকলেও, তাঁর মন ছিল চাকরির পরীক্ষার দিকে। এইভাবে একদিন কাজের সময় তাঁর কাছে কলকাতার চিত্তরঞ্জন কলেজের প্রিন্সিপালের পক্ষ থেকে ফোন আসে। ফোনের ওপার থেকে প্রিন্সিপাল মহাশয় বিশ্বজিতকে কলেজে পার্ট টাইম অধ্যাপক হিসেবে কাজ করার কথা বলতেই রাজি হয়ে যায় বিশ্বজিৎ মন্ডল (biswajit mandal)। ফোন আসার পর থেকে আর কাজে মন বসে না বিশ্বজিতের। ভাগ্য সহায় হওয়ায় মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
এবিষয়ে বিশ্বজিৎ জানান, ‘এবার আর বাড়ি তৈরি নয়, এবার কলেজে ছাত্র ছাত্রীদের পড়াব’। ছেলের এই আনন্দে উৎফুল্ল বিশ্বজিতের বাবা মাও। তাঁর মা টুনি মণ্ডল বলেন, ‘ছেলের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন থাকায় অনেক কলেজে পার্ট টাইম শিক্ষকতার জন্য আবেদন করেও চাকরি মেলেনি। আর আজ ছেলের এই স্বপ্ন পূর্ণ হল’। যে হাতে একদিন গড়েছেন বড় বড় ইমারত, এবার সেই হাতেই ভবিষ্যতের দেশের কারিগর তৈরি করবেন বিশ্বজিৎ মন্ডল (biswajit mandal)।