চলমান দূরভাষ, অর্থাৎ বর্তমান সময়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই মোবাইল (phone), যাকে ছাড়া এক মুহুর্তও কল্পনা করতে পারা যায় না। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে এই মোবাইলই অনেকের ধ্যান, জ্ঞান, সবকিছু। সবসময়ই প্রায় সকলের হাতেই থাকতে দেখা যায় মোবাইল। তবে এই মোবাইল ব্যবহারের যেমন একটা ভালো দিক রয়েছে, তেমনই কিন্তু এর একটা খারাপ দিকও বিদ্যমান। যার ফলে বহু মানুষ এই মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে নিজের আসল কর্মকাণ্ডকেই ভুলতে বসছে।
মানুষের মধ্যে এই মোবাইলের প্রতি আসক্তি সবথেকে বেশি লক্ষ্য করা গিয়েছে করোনাকালে। এই সময় ছোট থেকে বড় সকলেই গৃহবন্দি দশায় থাকার ফলে মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। যার কুপ্রভাব পড়েছিল শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর।
আর এই অবস্থায় ছোট শিশু থেকে শুরু করে গোটা গ্রামবাসীকে এই আসক্তির হাত থেকে মুক্ত করতে এক অভিনব উপায় বের করল মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) একটি গ্রাম। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এই গ্রামের গ্রামবাসীদের দিনের মধ্যে একটা সময়ে মোবাইল থেকে দূরে থাকার কথা বলা হয়েছে। আর এই সময় দেওয়া হয়েছে সন্ধ্যে ৭ টা থেকে।
গ্রামবাসীদের সুস্থ রাখতে শুধুমাত্র মুখের কথাই নয়, সন্ধ্যে ৭ টা বাজতে না বাজতেই মহারাষ্ট্রের সাংলি জেলার ভাদগাঁও গ্রামে সাইরেন বাজিয়ে টানা ১ ঘণ্টা বন্ধ রাখা হয় ডিজিটাল কানেকশন। এই এক ঘণ্টা গ্রামবাসীরা না পারেন মোবাইল (phone) দেখতে, না পারেন টিভি দেখতে। এই সময়টা তাঁদের এই আসক্তি থেকে দূরে রাখা হয়।
এই বিষয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিজয় মোহিত জানান, ‘করোনাকালে অনলাইন ক্লাস চলায় শিশুরা মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন স্কুল কলেজ খোলার পরও তাঁদের মধ্যে এমনকি বাড়ির বড়দের মধ্যেও একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাঁরা দিনের বেশিরভাগ সময়টাই হয় মোবাইল না হয় টিভি নিয়ে বসে থাকছে। নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় পাচ্ছেন না তাঁরা’।
এই অবস্থায় গত ১৪ ই অগাস্ট সাংলি গ্রামের পঞ্চায়েতে সমাবেশে সম্মিলিতভাবে ঠিক করা হয়, গ্রামবাসীদের মন থেকে এই আসক্তি দূর করার জন্য প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে গ্রামের সকল মানুষকে টিভি এবং মোবাইল থেকে দূরে রাখতে হবে। আর এই বিষয়ে প্রায় ৩ হাজার গ্রামবাসীদের মধ্যে প্রথমে পুরুষেরা রাজী হলেও, সিরিয়াল দেখার জন্য মহিলারা রাজী হচ্ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তীতে সকলের কথা চিন্তা করে তারাও রাজী হয়ে যান। আর তারপর থেকেই প্রতিদিন সন্ধ্যে ৭ টায় মন্দিরের চূড়ায় একটি সাইরেন বাজিয়ে টিভি (television), মোবাইল (phone) বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। আবার এক ঘণ্টা পর সাইরেন বাজিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক করা হয়।